ফ্ল্যাট-বাড়ি বা কৃষি-অকৃষি জমি রিটার্নে দেখাবেন নাকি দেখাবেন না । Professionals TaxVAT
আমাদের কৃষি বা অকৃষি জমি থাকতে পারে। এগুলো আমাদের সম্পদ। এ থেকে আয় হলে তার ওপর ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু সবসময় এ সম্পদ থেকে আয় নাও হতে পারে । আয় না হলেও সম্পদ আয়কর রিটার্নে দেখাতে হয়। এগুলো দেখাতে হয় সম্পদ ও দায় বিবরণীতে।
জমি আপনি সাধারণত দুভাবে পেতে পারেন। এক, নিজে ক্রয় করে। দুই, পৈতৃক সূত্রে। এখন আপনি যেভাবেই জমির মালিকানা পান না কেন আপনাকে তা রিটার্নে দেখাতে হবে।
জমি ক্রয়
জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনি যত টাকা দিয়ে কিনেছেন তা টাকার ঘরে উল্লেখ করবেন। কিন্তু জমি ক্রয়ের সঙ্গে আপনি বিক্রেতাকে যা দিয়েছেন তার সঙ্গে জমির রেজিস্ট্রেশন বাবদ এবং ট্যাক্স পরিশোধ যা করা হয়েছে তা ক্রয়মূল্যের সঙ্গে যোগ করে মোট অংক টাকার ঘরে লিখতে হবে। কতটুকু জমি কিনেছেন এবং কোথায় কিনেছেন তার ঠিকানাসহ উল্লেখ করে দেবেন।
আয়কর রিটার্ন যখন দাখিল করবেন তখন যে জমি কিনেছেন তার প্রমাণ হিসেবে জমির দলিল, খাজনা এবং অন্যান্য খরচের রসিদ যদি থাকে তাহলে এসবের ফটোকপি সঙ্গে দিয়ে দেবেন।
পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীতে কৃষি এবং অকৃষি জমি আলাদা করে দেখাতে হয়। আইটি-১০বি(২০২৩) এ পরিসম্পদ দায় ও ব্যয় বিবরণী উল্লেখ রয়েছে। এই বিবরণীর ৮ নম্বর সিরিয়ালের (ঘ)- তে অকৃষি সম্পত্তি/জমি/গৃহ-সম্পত্তি উল্লেখ করার স্থান রয়েছে। এখানে অকৃষি জমির পরিমাণ, ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
এই ০৮ নম্বর সিরিয়ালের (ঘ)-তে প্লট বা ফ্ল্যাট বা বাড়ি যাই থাকুক, আপনি উল্লেখ করবেন। আর আপনার যদি কোনো কৃষি জমি থাকে তাহলে তা উল্লেখ করবেন ০৮ নম্বর সিরিয়ালের (ঙ)-তে। কৃষি জমির পরিমাণসহ কোথায় কোথায় এই কৃষি জমি আছে তা উল্লেখ করে টাকার পরিমাণ লিখতে হবে। সবক্ষেত্রেই আপনি রেজিস্ট্রেশনসহ যদি কোনো কর দিয়ে থাকেন, তা জমি বা প্লট বা ফ্ল্যাটের মূল্যের সঙ্গে যোগ করে দেখাবেন।
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি
পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমির মূল্য অনেক সময়ই জানা থাকে না। দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই বহু বছর আগে থেকে বংশ পরম্পরায় এই সম্পত্তি চলে আসছে এবং শেষ পর্যন্ত আপনি তার মালিকানা পেয়েছেন। যেহেতু এই সম্পত্তি অনেক আগে কেনা হয়েছে তাই এর মূল্য সঠিকভাবে উল্লেখ করা যায় না। আবার অনেক সময় বর্তমান বাজারমূল্য উল্লেখ করা যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ থাকে ।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় টাকার ঘর ফাঁকা রেখে দেয়া। তাহলে আর কোনো ঝামেলা থাকবে না। তবে জমি যদি আপনার বাবা কিনে থাকেন তাহলে আপনি যদি সেই জমির মূল্য জেনে থাকেন তাহলে সেই মূল্য উল্লেখ করতে পারেন। তবে এটা সমসাময়িক হলেই কেবল জানা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্লট বা বাড়ির মালিকানা পেয়েছেন । আবার ভাইবোন মিলেও এই সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারেন। পরে ভাইবোন মিলে নিজেরা বাড়ি তৈরি করে নিজেদের মধ্যে ফ্ল্যাট ভাগ করে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে জমি এবং ফ্ল্যাটের মূল্য কত দেখাবেন?
আবার দেখা যায়, নিজেরা তৈরি না করে কোনো ডেভেলপারকে দিয়ে করিয়েছেন। তখন সাইনিং মানি পেয়েছেন এবং সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাটের মালিকও হয়েছেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডেভেলপারের কাছ থেকে যে ফ্ল্যাট পেয়েছেন তা থেকে কিছু ফ্ল্যাট বিক্রি করেছেন। এসব ক্ষেত্রে যেহেতু জমি বা প্লট উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন, আপনি কেনেননি, তাই কত মূল্য ধরবেন? এক্ষেত্রে আয়কর কত দিতে হবে? বা আদৌ দিতে হবে কি না?
এমন কিছু জটিল লেনদেন যে কোনো আয়বছরে আমাদের সৃষ্টি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে কোন ট্যাক্স কনসালট্যান্টের সহায়তা নেবেন।
আপনি যদি অসুস্থ হন তাহলে আপনি ডাক্তারের কাছে যান, আবার আপনি যখন বাড়ি তৈরি করেন তখন ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যান। কারণ তারা এ কাজ সম্পর্কে দক্ষ । তাই আপনিও যখন বছরে বড় একটা লেনদেন করবেন তখন ভালো ট্যাক্স এক্সপার্টের কাছে যাওয়া ভালো। কারণ, একবার যদি আপনার রিটার্নে ঝামেলা হয় তাহলে তা বহু বছর ধরে, এমনকি আজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। এর জন্য ভবিষ্যতে যে কোনো সময় আইনি ঝামেলা হতে পারে।
আর এমন না যে, এ ধরনের লেনদেন আপনার প্রতিবছরই হয়। খুব কম সময়ই আমরা সবাই এই ধরনের বড় এবং জটিল লেনদেনের সম্মুখীন হই। এজন্য আপনি যদি ওই বছর রিটার্ন তৈরি করার আগে ট্যাক্স কনসালট্যান্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেন বা রিটার্ন তৈরি করে নেন, তাহলে পরের বছর আর কোনো ঝামেলা থাকবে না এবং আপনি পরের বছরগুলোতে ঝামেলামুক্ত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
কৃষি জমি বা ফ্ল্যাট সাধারণত সবার না থাকলেও স্বর্ণ কম-বেশি সবারই থাকে। রিটার্নে স্বর্ণের পরিমাণ কতটুকু দেখাবেন, বেশি দেখাবেন নাকি কম, নাকি দেখাবেন না – বিস্তারিত জানতে এই সম্পর্কিত লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।
লেখার লিংকটি এটাচ করে দিলাম এখানে ক্লিক করুন
মোহাম্মদ আদনান
আয়কর আইনজীবী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড