সঞ্চয়পত্রের আয় ট্যাক্স রিটার্নে কীভাবে দেখাবেন? | Professionals TaxVAT
সঞ্চয়পত্রের আয় আলাদা খাত হিসেবে রিটার্নে দেখাতে হয়। সঞ্চয়পত্রের আয় আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয় খাতে দেখাতে হয়।
আগের পোস্টেই জানিয়েছি আয়কর রিটার্নে মোট ১০টি আয়ের খাত রয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয় হলো একটি। এ পর্যন্ত আপনি বেতন খাত, পেশা খাত, গৃহ-সম্পত্তি খাত এবং অন্যান্য উৎস হতে আয় – এই খাতগুলো জেনেছেন এবং কীভাবে সেসব খাতে আয় হলে অব্যাহতি/খরচ বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হয় তা জেনেছেন। এবার দেখা যাক আর্থিক পরিসম্পদ হতে আয় খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের আয় কীভাবে দেখাতে হয়।
আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য যেসব বিনিয়োগ খাত সম্পর্কে জেনেছিলাম তার মধ্যে অন্যতম হলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। অন্যান্য খাতের চেয়ে এই খাতের সুবিধা অনেক বেশি এবং এজন্য অনেক বিনিয়োগকারী সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করাকে পছন্দ করেন।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কয়েকটি সুবিধা হলো, এটা বাংলাদেশ সরকার ইস্যু করে, তাই এটা নিরাপদ। মেয়াদান্তে ইন্টারেস্টসহ বিনিয়োগকৃত টাকা পাওয়া যায় সহজেই। অন্যান্য বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের আয়ের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
আর এর সবচেয়ে বড় দুটি সুবিধা হলো, একদিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে যেমন কর রেয়াত পাওয়া যায়, আবার অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে যে ইন্টারেস্ট পাওয়া যায় তা থেকে উৎসে যে ১০% কর কর্তন করে রাখা হয় তাই চূড়ান্ত কর। আপনাকে আর কর দিতে হবে না।
একটু বিস্তারিত যদি বলি, আপনি যদি ১,০০,০০০ টাকা দিয়ে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র কেনেন তাহলে বর্তমান হার অনুযায়ী আপনি ১১.০৪% ইন্টারেস্ট পাবেন। এই ইন্টারেস্ট আপনি পাবেন যদি তিন বছর পর্যন্ত বিনিয়োগ ধরে রাখেন। কিন্তু যদি তিন বছরের আগেই আপনি ভেঙে ফেলেন তাহলে আবার ইন্টারেস্টের পরিমাণ কিছু কমে যাবে।
তাহলে আপনি তিন বছরে মোট পাবেন ১,৩৩,১২০ টাকা। আসল ১,০০,০০০ টাকা বাদ দেয়ার পর আপনার তিন বছরে মোট মুনাফার পরিমাণ হলো ৩৩,১২০ টাকা।
আপনাকে যখন বিনিয়োগের পুরো টাকা ফেরত দেবে তখন সঞ্চয়পত্রের আয় বাবদ প্রাপ্ত ৩৩,১২০ টাকা থেকে ১০% অর্থাৎ ৩,৩১২ টাকা উৎসে কর কর্তন করে বাকি ২৯,৮০৮ টাকা পরিশোধ করবে।
আপনার কাছ থেকে এই যে উৎসে ৩,৩১২ টাকা কেটে রাখল আপনাকে কিন্তু এই ৩৩,১২০ টাকার ওপর আর কোনো কর দিতে হবে না। এটাই হলো চূড়ান্ত কর। এই সুবিধার জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করাকে সবার ওপরে রাখেন।
কিন্তু এই বিশেষ সুবিধা আপনি এফডিআর সুদের ওপর পাবেন না । আপনি যদি কোনো ব্যাংকে এফডিআর করেন তাহলে একদিকে যেমন তার ওপর বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দেখাতে পারবেন না, আবার তেমনি ঠিক অন্যদিকে হ্রাসকৃত হারে কর সুবিধাও পাবেন না।
আপনি যখন এফডিআর থেকে সুদ পাবেন তখন কিন্তু সেই সুদ থেকে ব্যাংক উৎসে ১০% কর কর্তন করে তারপর আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করবে। আপনি যখন করযোগ্য আয় গণনা করবেন তখন আপনাকে এফডিআর সুদ অন্যান্য খাতের আয়ের সঙ্গে যোগ করে দেখাতে হবে এবং কর গণনায় নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ আপনার আয় যদি বেশি হয় তাহলে কিন্তু আপনার করের পরিমাণও বেশি হবে।
তবে সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এখানে আপনি যেহেতু ৩৩,১২০ টাকার ওপর চূড়ান্ত কর দিচ্ছেন, বাড়তি কর দিচ্ছেন না, তাই আপনি এই টাকার ওপর বিনিয়োগ ভাতা দাবি করতে পারবেন না। অর্থাৎ বিনিয়োগ ভাতা আপনি যখন গণনা করবেন তখন ৩৩,১২০ টাকা আলাদা রেখে বাকি খাতে আপনার যে করযোগ্য আয় আছে তার ওপর ৩% হিসেবে নির্ণয় করবেন।
Bangladesh Professionals VAT & Tax Law Firm