একজন চাকরিজীবী করদাতার বেতন খাতে যে আয় হয় তার একটি উদাহরণ ব্যবহার করে ধাপে ধাপে প্রথমে করযোগ্য আয় বের করব। তারপর করধাপ অনুযায়ী করহার ব্যবহার করে করদায় নির্ণয় করব।
মিস্টার করিম একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি তার কোম্পানি থেকে নিচের সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন:
০১। মূল বেতন মাসিক ৮০,০০০ টাকা ।
০২। বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫০% অর্থাৎ ৪০,০০০ টাকা (মাসিক)।
০৩। যাতায়াত ভাতা মাসিক ৫,০০০ টাকা ।
০৪। চিকিৎসা ভাতা মাসিক ৫,০০০ টাকা ।
০৫। প্রভিডেন্ড ফান্ডে মূল বেতনের ১০% মিস্টার করিম এবং তার কোম্পানি দিয়ে
থাকেন।
০৬। উৎসব ভাতা মাসিক মূল বেতনের সমান দুটি।
০৭। ইনসেনটিভ বোনাস/পারফরম্যান্স বোনাস বছরে ৭০,০০০ টাকা।
জেনে গেলাম মিস্টার করিম চাকরি করে তার কোম্পানি থেকে বেতন খাতে কী কী সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশে বেশিরভাগ কোম্পানিতেই ওপরে যে সুবিধাগুলোর কথা উল্লেখ করেছি তার মধ্যে থেকেই চাকরিজীবী করদাতা বেতন খাতে সুবিধা পেয়ে থাকেন ।
তবে কেউ কেউ উপরে উল্লিখিত সুবিধার বাইরেও বাড়তি কিছু সুবিধা কোম্পানি থেকে পেয়ে থাকেন। আপনিও যদি এমন সুবিধা পেয়ে থাকেন এবং যদি জটিল মনে হয় তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
আপনি যখন আপনার বেতন খাতের আয় থেকে করযোগ্য আয় গণনা করবেন তার আগে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সেই প্রতিষ্ঠান থেকে স্যালারি স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করুন। আপনার কোম্পানির অ্যাকাউন্টস বা এইচআর বিভাগ থেকে এই স্যালারি স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
প্রথমে মূল বেতন মাসিক ৮০,০০০ টাকাকে ১২ মাস দিয়ে গুণ করুন। তাহলে পাচ্ছি ৯,৬০,০০০ টাকা। আপনিও মাসে যে মূল বেতন পাচ্ছেন তাকে ১২ দিয়ে গুণ করুন। হাতের কাছে একটা সাদা কাগজ রাখুন এবং আমার সাথে সাথে আপনার হিসেব করে নিন ।
বাড়িভাড়া ভাতা, যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড-কে ১২ মাস দিয়ে গুণ করে মোট টাকার পরিমান বের করুন এবং তা মোট আয়ের ঘরে লিখুন।
উৎসব ভাতা পেয়েছেন মূল বেতনের দুইটা। তাই আমরা মাসিক মূল বেতন ৮০,০০০ টাকাকে ২ দিয়ে গুণ করে ১,৬০,০০০ টাকা লিখবো। আর ইনসেনটিভ বোনাস পেয়েছেন ৭০,০০০ টাকা। এটাও মোট আয়ের সাথে যোগ হবে। আপনি চাকরি করে ইনসেনটিভ বোনাস/পারফর্মেন্স বোনাস তা যে নামেই পান না কেন তা মোট আয়ের সাথে যোগ করবেন।
বেতন খাতে তাহলে সারা বছরে মোট আয় হয়েছে ১৮,৮৬,০০০ টাকা।
আয়কর আইন ২০২৩ এর ষষ্ঠ তফসিল, অংশ ১ এর অনুচ্ছেদ ২৭ এ উল্লেখ রয়েছে, চাকরি হতে আয় হিসেব করার সময় এক-তৃতীয়াংশ বা ৪,৫০,০০০ টাকা; এই দুইটি অংকের মধ্যে যেটা ছোট হবে তা বেতন খাতের মোট আয় থেকে বাদ দিতে হবে।
১৮,৮৬,০০০ টাকার এক-তৃতীয়াংশ ৬,২৮,৬৬৭ টাকা। কিন্তু সর্বোচ্চ সীমা হলো ৪,৫০,০০০ টাকা । তাহলে মি করিম এই দুইটি অংকের মধ্যে যেহেতু ৪,৫০,০০০ টাকা ছোট, তাই তিনি ৪,৫০,০০০ টাকা মোট বেতন খাতের আয় থেকে অব্যাহতি বাদ দিতে পারবেন। এবং বাদ দেওয়ার পর করযোগ্য আয়ের পরিমান দাড়ায় ১৪,৩৬,০০০ টাকা ।
যেহেতু মি করিমের করযোগ্য আয় ১৪,৩৬,০০০ টাকা যা করমুক্ত সীমা ৩,৫০,০০০ টাকা অতিক্রম করেছে তাই তাকে এই টাকার উপর কর দিতে হবে ।
এতোক্ষণ আমরা যে করযোগ্য আয় বের করেছি তা চলুন এবার নিচের টেবিল থেকে দেখে নেই।
ক্র. নং | বেতন খাত | আয় |
০১ | মূল বেতন | ৯,৬০,০০০ |
০২ | বাড়ি ভাড়া ভাতা | ৪,৮০,০০০ |
০৩ | যাতায়াত ভাতা | ৬০,০০০ |
০৪ | চিকিৎসা ভাতা | ৬০,০০০ |
০৫ | প্রভিডেন্ট ফান্ড | ৯৬,০০০ |
০৬ | উৎসব ভাতা | ১,৬০,০০০ |
০৭ | ইনসেনটিভ বোনাস/পারফরম্যান্স বোনাস | ৭০,০০০ |
মোট আয় | ১৮,৮৬,০০০০ | |
অব্যাহতিঃ
মোট আয়ের ১/৩ অংশ – ১৮,৮৬,০০০/৩ = ৬,২৮,৬৬৭ টাকা; অথবা সর্বোচ্চ ৪,৫০,০০০ টাকা |
৪,৫০,০০০ | |
মোট করযোগ্য আয় | ১৪,৩৬,০০০ |
Thank you
Mohammad Adnan
Income tax practitioner, NBR
mobile- 01879679979