অন্যান্য উৎস হতে আয় আয়কর রিটার্নের কোথায় দেখাবেন? | Professionals TaxVAT

অন্যান্য উৎস হতে আয় আয়কর রিটার্নের কোথায় দেখাবেন? | Professionals TaxVAT

আয়কর রিটার্নে মোট দশটি আয়ের খাত উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে নয়টি আয়ের খাতে যে আয়গুলো পড়বে না সেগুলো অন্যান্য উৎস হতে আয় দেখাতে হবে। চাকরি করে যে বেতন খাতে আয় হয়েছে সে সম্পর্কে আগেই আলোচনা করেছি। কীভাবে বেতন খাতে প্রাপ্ত আয় থেকে আয়কর আইনে দেয়া অব্যাহতি বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে এবং তারপর বিনিয়োগ ভাতা, কর রেয়াত ও করদায় বের করব তা জেনেছি।

চাকরির পাশাপাশি একজন শিক্ষক টিউশনি করে বাড়তি আয় করেন আবার একজন চিকিৎসক হাসপাতালে চাকরির পাশাপাশি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখেও পেশা খাতে আয় করে থাকেন। এসবই আগের পোস্টে বিস্তারিত জেনেছি। কিন্তু এর বাইরে আমরা একটু বেশি উপার্জনের জন্য সময় পেলেই কাজ করে থাকি। আবার আমরা প্রতিমাসে যে আয় করি তার সম্পূর্ণ কিন্তু খরচ করি না । যেমন, আপনি জেনেছেন বিনিয়োগ ভাতার কথা । করদায় কমানোর জন্য আয়কর আইনে করদাতাদের কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে।

আয়কর আইনে উল্লিখিত খাতে আপনি বিনিয়োগ করে তার ওপর কর রেয়াত দাবি করতে পারেন, যা আপনার করদায় বৈধভাবে বহুলাংশে হ্রাস করতে পারে। তাহলে এই যে আপনি কর রেয়াত পাওয়ার জন্য বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করলেন, এই বিনিয়োগ থেকে কিন্তু আপনি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে রিটার্ন পেয়ে থাকেন। এই রিটার্ন হতে পারে সুদ বা মুনাফা। যেমন, আপনি যদি ব্যাংকে এফডিআর করেন তাহলে সেখান থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ বা মুনাফা পেতে পারেন। এসবই হলো আপনার অন্যান্য উৎস হতে আয় ।

আবার, আমরা যে একজন শিক্ষকের করদায় গণনা করলাম তিনি কিন্তু চাকরি, টিউশনির পাশাপাশি ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখা, প্রশ্নপত্র তৈরি করা ইত্যাদি কাজ করেও বাড়তি আয় করে থাকেন। আবার একজন চিকিৎসক চাকরির এবং প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ করেও আয় করে থাকেন। আবার, বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বক্তৃতা দিয়ে সেখান থেকে সম্মানীও পেয়ে থাকেন। আপনি এতক্ষণ ধরে সচরাচর যেসব খাতে আয় হয়ে থাকে তা জেনেছেন ।

এর বাইরেও যদি আপনার কোনো আয় থেকে থাকে তাহলে প্রথমে আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা নয়টি খাত মিলিয়ে দেখবেন। যদি ওই নয়টি খাতের মধ্যে না পড়ে তাহলে অন্যান্য উৎস হতে আয়ের ঘরে লিখে দেবেন ।

তবে আপনার যদি অন্যান্য উৎস খাতে আয় হয়ে থাকে তাহলে একটি বিষয় হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আপনার আয় থেকে উৎসে কর কর্তন করে বাকি টাকা আপনাকে চেক বা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়।

আপনি যে আয় করেছেন সেই আয়ে যদি উৎসে কর কর্তন প্রযোজ্য হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে টাকা পরিশোধের সময় প্রযোজ্য হারে কর কর্তন করে বাকি টাকা পরিশোধ করবে। এটাই আয়কর আইনের নিয়ম। যেমন, আপনি যদি পত্রিকায় বা কোনো জার্নালে লিখে সারাবছরে ১,০০,০০০ টাকা আয় করেন তাহলে আপনার কাছ থেকে উৎসে ১০,০০০ টাকা কেটে রেখে বাকি ৯০,০০০ টাকা আপনাকে পরিশোধ করবে। এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, যদিও আপনার ব্যাংকে বা চেকে ৯০,০০০ টাকা পরিশোধ করেছে, এখানে আপনার আয় কিন্তু ১,০০,০০০ টাকা। আপনাকে পুরো টাকার ওপরই কর দিতে হবে।

আপনি যখন বছরশেষে বিভিন্ন খাতে আয় থেকে করযোগ্য আয় গণনা করবেন তখন যেখান থেকে উৎসে কর কর্তন করেছেন, সেই উৎস কর্তনসহ মোট টাকা আপনাকে আয়ের সঙ্গে যোগ করে দেখাতে হবে। এখানে আপনার একটা প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে আমার কাছ থেকে যে উৎসে কর কর্তন করে রাখল সেই টাকার কী হবে?

আগের পোস্টগুলোতে যখনই করদায় গণনা করেছি তখন দেখেছেন মোট করদায় থেকে কর রেয়াত বাদ দেয়ার পর নিট করদায় বের করেছি এবং নিট করদায় থেকে পরে উৎসে কর কর্তন বাদ দিয়েছি।

আপনি যেমন বিভিন্ন খাতের আয়গুলো যোগ করে মোট করযোগ্য আয় বের করেছেন, ঠিক তেমনি আপনার কাছ থেকে যেসব আয়ের ওপর কর কর্তন করা হয়েছে সেসব কর কর্তন যোগ করে একসঙ্গে নিট করদায় থেকে বাদ দিয়ে দেখাবেন এবং এই বাদ দেয়ার পর যদি করদায় থাকে তাহলে তা চালানের মাধ্যমে জমা দেবেন।

তবে আপনি যে উৎসে কর কর্তনের কথা বলছেন বা করদায় থেকে বাদ দিয়ে দেখাচ্ছেন, তার প্রমাণ হিসেবে রিটার্নের সঙ্গে কিন্তু চালানের কপি দাখিল করতে হবে। আপনি যদি প্রমাণ হিসেবে চালানের কপি জমা দিতে না পারেন তাহলে কিন্তু আপনি যে উৎসে কর কর্তন দাবি করছেন তা আয়কর কর্তৃপক্ষ মেনে নেবে না । তাই যেখানে যেখানে আপনার আয় হয়েছে এবং কর কর্তন করে আপনাকে টাকা পরিশোধ করেছে, সেখান থেকে অবশ্যই রিটার্ন দাখিল করার আগেই চালানের কপি সংগ্রহ করতে হবে।

তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। সবক্ষেত্রে আপনি চালানের কপি পাবেন না। যেমন, আপনি যদি ব্যাংকে এফডিআর করেন বা সঞ্চয়ী হিসাব থাকে, সেখান থেকে আপনাকে যে সুদ/মুনাফা দেয়া হয়, তা কিন্তু নির্ধারিত কর কেটে তারপর আপনার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। আপনি যদি ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখেন তাহলে সুদের আগে বা পরে দেখবেন কর কর্তন করা হয়েছে। আপনি সেই স্টেটমেন্ট দেখে জেনে নিন আপনার সুদ কত এবং উৎসে কর কর্তন কত। এখানে ব্যাংক আপনাকে চালান দেবে না। আপনি রিটার্ন দাখিল করার সময় যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেবেন সেখানে যে কর কর্তনের পরিমাণ উল্লেখ আছে তাতেই হবে।

তবে বিনিয়োগের মধ্যে অনেকেরই পছন্দ সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্র থেকে যে সুদ আসে তা আয়কর রিটার্নে দেখানো আবার সম্পূর্ণ আলাদা। পরবর্তী লেখায় সঞ্চয়পত্রের আয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

 

Bangladesh Professionals VAT and Tax Law Firm