রিটার্নে নগদ টাকা কত দেখাবেন? | Professionals TaxVAT
প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন তৈরির সময় করদাতারা সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করেন তার মধ্যে একটি হলো, ট্যাক্স রিটার্নে নগদ টাকা কত দেখাব?
হাতে নগদ কত দেখাবেন?
সম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীতে ৩০ জুন তারিখের ব্যালান্স দেখাতে হয়। একটি কোম্পানির ব্যালান্স শিটের মতো। তাই ৩০ জুন তারিখে আপনার হাতে নগদ টাকা যা আছে আপনি তাই লিখবেন। কিছু ট্যাক্স রিটার্নে লক্ষ্য করেছি, নগদের ঘরে অংকের পরিমাণ অস্বাভাবিক। কয়েক লক্ষ টাকা। আমি একটি রিটার্নে গত বছর ২২ লাখ টাকা দেখেছি। যেহেতু ট্যাক্স কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করি তাই প্রায়ই কিছু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। একটি রিটার্নে কোটি টাকাও নগদ টাকা দেখেছি ।
এই যে অস্বাভাবিক পরিমাণ নগদ টাকা রিটার্নে দেখাচ্ছেন এর জন্য কিন্তু তাদের কোনো না কোনো সময় অডিটের সম্মুখীন হতে হবে। তখন এই টাকার উৎস কোথায় দেখাবেন? আমি প্রথমে মনে করেছিলাম, হয়তো কোনো সম্পদ বিক্রি করেছেন এবং ওইদিন ব্যাংকে জমা দিতে পারেননি। তাই এত টাকা হাতে নগদ রয়ে গেছে। কিন্তু আমি যখন প্রশ্ন করি, তখন তিনি বলেন, গত বছর যাকে দিয়ে করিয়েছিলাম, তিনি পরামর্শ দেন বেশি করে দেখিয়ে দেয়ার জন্য। পরে কাজে লাগবে।
এ কাজ ভুলেও করতে যাবেন না। কারণ, আপনার ট্যাক্স ফাইলে একবার অস্বাভাবিক কিছু বা যা সঠিক নয় দেখাবেন, তারপর থেকে কিন্তু প্রতিবছর আপনাকে এই জের টানতে হবে এবং এই জের আপনি সহজে বন্ধ করতে পারবেন না। আপনাকে বহু বছর এই ঝামেলা বয়ে বেড়াতে হবে।
আপনি নগদ কত দেখাবেন এটা আসলে নির্ভর করে আপনার ওপর। কারণ আপনার পকেটে বা সংসার খরচ করার জন্য বাসায় সাধারণত যত টাকা হাতে রাখেন, আপনি তাই লিখবেন । এখন আমরা সবাই কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ব্যবহার করি। তাই আমাদের নগদের খুব বেশি দরকার পড়ে না। যদি কোনো সময় নগদ টাকার পরিমাণ দরকার পড়ে তাহলে কার্ড দিয়ে বুথ থেকে তুলে নিই।
তবে কিছু ক্ষেত্রে নগদ টাকার পরিমাণ বেশি থাকতে পারে। যেমন, যারা ব্যবসা করেন তাদের কাছে নগদ টাকা বেশি থাকতে পারে। এরকম ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের কাছে সাধারণত নগদ টাকা বেশি থাকে না।
আরেকটা বিষয় আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, ৩০ জুন তারিখে আমার কাছে নগদ কত টাকা ছিল তা কীভাবে বুঝব?
এর উত্তর হলো, আপনার কাছে সচরাচর নগদ যা থাকে আপনি আনুমানিক তাই লিখবেন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, যা লিখছেন তা যেন অস্বাভাবিক মনে না হয়।
আর আপনি নগদ টাকার সঙ্গে ব্যাংক ব্যালান্স মেলাবেন না।
ব্যাংক ব্যালান্স কত দেখাবেন?
৩০ জুন তারিখে আপনার ব্যাংক ব্যালান্স যা আছে আপনি তাই দেখাবেন। আপনার যদি একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে আপনি সব ব্যাংক ব্যালান্স যোগ করে দেখাবেন । আপনি যখন ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করবেন তার আগে আপনার যত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে সেগুলোর ব্যাংক স্টেটমেন্ট ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সংগ্রহ করুন। এবার ৩০ জুন তারিখে একে একে সব ব্যালান্স যোগ করে ব্যাংকের ঘরে লিখুন।
এই যে সম্পদের তথ্য দিতে গিয়ে মূল্য বা সম্পদের পরিমাণ কত দেখাবেন বা বাড়িয়ে দেখালে কোনো লাভ আছে কি না এ ধরনের প্রশ্ন কিছু সময় শোনা যায়। এর উত্তর আসলে কী হবে?
সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখালে কোনো লাভ আছে কি?
পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী পূরণ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করদাতারা করে থাকেন তা হলো, সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখালে কোনো লাভ আছে কি না।
এর উত্তর হলো, না।
লাভের চেয়ে বিড়ম্বনা বেশি। কারণ, যা আপনার নেই তা যদি বলেন তাতে ঝামেলা বাড়বেই। তাই আপনার যা আছে তাই লিখুন।
সম্পদ বেশি দেখিয়ে দেয়ার কথা যারা বলেন, তাদের যুক্তি হলো, আপনি যদি ভবিষ্যতে কোনো সম্পদ কেনেন বা বিক্রি করেন, সেক্ষেত্রে কাজে আসবে। তবে আমরা যারা সাধারণ করদাতা তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আয়ের উৎস সুনির্দিষ্ট। যেমন, একজন চাকরিজীবী করদাতা। তার আয় কিন্তু শুধু মাস শেষ হলে বেতন খাত থেকেই আসে। খুব কম সময়ই দেখা যায় চাকরির পাশাপাশি বাড়তি কোনো কাজ করে অতিরিক্ত আয় করতে।
মাস শেষ হলে যে সঞ্চয় থাকে তা আমরা সাধারণত এফডিআর বা সঞ্চয়পত্র কিনে থাকি । তা থেকে কিছু ইন্টারেস্ট পাওয়া যায় । এভাবে জমে যখন একটা সময় ভালো একটা অংক দাঁড়ায় তখন আমরা একটা ফ্ল্যাট কেনার চিন্তা করি। এই চিন্তা বা আশা মোটামুটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখে থাকি।
তবে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ওপরের ধারণার ব্যতিক্রম হতে পারে। যেমন, কেউ যদি রিটার্নে যে আয় দেখান তা থেকেও যদি তার আয় বেশি থাকে, যা তিনি গোপন করেছেন, সেক্ষেত্রে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। কারণ তারা যে আয় দেখাচ্ছেন না তা দিয়ে হয়তো সংসার খরচ চালিয়ে যা থাকে তা দিয়ে সম্পদ কেনেন। এখন যেহেতু তার সম্পদ বাড়ছে; কিন্তু আয় কম দেখাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে সম্পদ বেশি করে দেখিয়ে দিলে পরে সমন্বয় করতে পারবেন।
এই ধরনের উদ্দেশ্য আমরা যারা সাধারণ করদাতা তাদের নেই। তাই আমরা পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীতে সঠিক তথ্য দেব। কারণ, আমরা অসত্য তথ্য দিয়ে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়তে চাই না।
আরেকটা বিষয় হলো, সম্পদের পরিমাণ বেশি করে দেখাতে থাকলে একসময় যদি তা ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করে তাহলে আবার সারচার্জ দিতে হয়।
Bangladesh Professionals VAT & Tax Law Firm