অতিরিক্ত সম্পদ ও সারচার্জ | Professionals TaxVAT

Professionals TaxVAT, Income tax and vat

অতিরিক্ত সম্পদ ও সারচার্জ | Professionals TaxVAT

সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখালে বিড়ম্বনা বেশি

পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী পূরণ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি করদাতারা করে থাকেন তা হলো, সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখালে কোনো লাভ আছে কি না।

এর উত্তর হলো, না।

লাভের চেয়ে বিড়ম্বনা বেশি। কারণ, যা আপনার নেই তা যদি বলেন তাতে ঝামেলা বাড়বেই। তাই আপনার যা আছে তাই লিখুন।

সম্পদ বেশি দেখিয়ে দেয়ার কথা যারা বলেন, তাদের যুক্তি হলো, আপনি যদি ভবিষ্যতে কোনো সম্পদ কেনেন বা বিক্রি করেন, সেক্ষেত্রে কাজে আসবে। তবে আমরা যারা সাধারণ করদাতা তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আয়ের উৎস সুনির্দিষ্ট। যেমন, একজন চাকরিজীবী করদাতা। তার আয় কিন্তু শুধু মাস শেষ হলে বেতন খাত থেকেই আসে। খুব কম সময়ই দেখা যায় চাকরির পাশাপাশি বাড়তি কোনো কাজ করে অতিরিক্ত আয় করতে।

মাস শেষ হলে যে সঞ্চয় থাকে তা আমরা সাধারণত এফডিআর বা সঞ্চয়পত্র কিনে থাকি । তা থেকে কিছু ইন্টারেস্ট পাওয়া যায় । এভাবে জমে যখন একটা সময় ভালো একটা অংক দাঁড়ায় তখন আমরা একটা ফ্ল্যাট কেনার চিন্তা করি। এই চিন্তা বা আশা মোটামুটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখে থাকি।

তবে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ওপরের ধারণার ব্যতিক্রম হতে পারে। যেমন, কেউ যদি রিটার্নে যে আয় দেখান তা থেকেও যদি তার আয় বেশি থাকে, যা তিনি গোপন করেছেন, সেক্ষেত্রে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়ে দেয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। কারণ তারা যে আয় দেখাচ্ছেন না তা দিয়ে হয়তো সংসার খরচ চালিয়ে যা থাকে তা দিয়ে সম্পদ কেনেন। এখন যেহেতু তার সম্পদ বাড়ছে; কিন্তু আয় কম দেখাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে সম্পদ বেশি করে দেখিয়ে দিলে পরে সমন্বয় করতে পারবেন।

এই ধরনের উদ্দেশ্য আমরা যারা সাধারণ করদাতা তাদের নেই। তাই আমরা পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীতে সঠিক তথ্য দেব। কারণ, আমরা অসত্য তথ্য দিয়ে ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়তে চাই না। আরেকটা বিষয় হলো, সম্পদের পরিমাণ বেশি করে দেখাতে থাকলে একসময় যদি তা ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করে তাহলে আবার সারচার্জ দিতে হয়।

সারচার্জ কখন দিতে হয় এবং কত দিতে হয়?

অর্থ আইন ২০২৩-এ ব্যক্তি করদাতার সারচার্জে কিছু পরিবর্তন এসেছে। এখন থেকে করদাতাকে আর ন্যূনতম সারচার্জ দিতে হবে না এবং সারচার্জ হারেও এসেছে পরিবর্তন।

ইতোমধ্যেই আপনি জেনেছেন, একজন করদাতা তার আয়কর রিটার্নের সঙ্গে কিছু বিবরণী দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে পরিসম্পদ, দায় ও খরচের বিবরণী অন্যতম। এই বিবরণী কীভাবে পূরণ করতে হয় এবং কী কী তথ্য দিতে হয় তা বিস্তারিত জেনেছেন। এই বিবরণীতে প্রদর্শিত নিট পরিসম্পদের পরিমাণ যদি ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করে তাহলে সারচার্জ দিতে হয়।

আইটি-১০বি(২০২৩) এর পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণীর ১০ নম্বর সিরিয়ালে যদি ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করে তাহলে আপনাকে সারচার্জ দিতে হবে। প্রথমে আপনি পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী পূরণ করুন। আপনার সমস্ত সম্পদ এবং দায়ের তথ্য দেয়ার পর এবার উল্লিখিত সিরিয়ালে দেখুন আপনার নিট সম্পদ ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে কি না? তাহলেই আপনি নিশ্চিত হয়ে যাবেন, আপনাকে সারচার্জ দিতে হবে কি না?

আপনি যখন নিশ্চিত হয়ে গেলেন, তখন প্রশ্ন আসে আপনি কীভাবে সারচার্জ গণনা করবেন এবং কোন টাকার ওপর গণনা করবেন? কত টাকা সারচার্জ দিতে হবে?

সারচার্জ গণনা করতে হয় করদায়ের ওপর। করদায় কীভাবে বের করতে হয় তা আমরা আগেই জেনেছি। করদায় বের করার পর আপনি যে বিনিয়োগ করেছেন তার ওপর যে কর রেয়াত পেয়েছেন তা বাদ দেয়ার পর যে করদায় থাকবে তার ওপর উল্লিখিত হারে সারচার্জ বের করতে হয়।

তাই কোনো করদাতার যদি নীট পরিসম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করেও কিন্তু যদি করযোগ্য আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করে তাহলে তার জন্য সারচার্জ প্রযোজ্য নয়। এজন্য সবার প্রথমে করযোগ্য আয় বের করে করমুক্ত আয়ের সীমা অতিক্রম করেছে কি না তা দেখতে হবে।

শুধু যে নীট পরিসম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করলেই সারচার্জ দিতে হবে এমন নয়। এর বাইরে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, যদি কোনো করদাতার একাধিক গাড়ি থাকে অথবা কোনো সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ৮ হাজার বর্গফুটের অধিক আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি থাকে তাহলে নীট পরিসম্পদ ৪ কোটি অতিক্রম না করলেও সারচার্জ দিতে হবে।

নীট পরিসম্পদের ওপর নির্ভর করে সারচার্জের হার। নীট পরিসম্পদ যত বাড়তে থাকবে সারচার্জের হারও তত বাড়তে থাকবে। অর্থ আইন ২০২৩-এ নতুন সারচার্জ হার ধার্য করা হয়েছে। সারচার্জের হারের তালিকাটি দেখে আসতে পারেন এখানেঃ সারচার্জের হার 

 

 

Bangladesh Professionals VAT & Tax Law Firm