ঠিকানা পরিবর্তন হলে কোন সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করবেন? | Professionals TaxVAT
১২ ডিজিটের টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনের সময় আপনাকে ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়। প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য ট্যাক্স সার্কেল ঠিক করা আছে। যেমন, ঢাকা সিভিল জেলায় অবস্থিত যে সকল বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী ও পেনশনভুক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর নাম অ, ই এবং ঈ অক্ষরগুলো দিয়ে শুরু হয়েছে তাদের ট্যাক্স জোন ৪, সার্কেল ৭১-এ রিটার্ন জমা দিতে হবে।
এক কথায়, আপনার টিন সার্টিফিকেটে যে সার্কেল উল্লেখ থাকবে আপনি সেখানেই আপনার রিটার্ন দাখিল করবেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, টিন সার্টিফিকেট নেয়ার সময় যে ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন তা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ট্যাক্স সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
তাই কেউ কেউ ঠিকানা পরিবর্তন হওয়ার পর টিন থাকা ঠিকানাও পরিবর্তন করতে চান। যেমন কেউ চাকরিস্থল পরিবর্তন করতে পারেন বা আবার কেউ বাসা পরিবর্তন করতে পারেন। এর ফলে তাদের আবাসস্থল এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বা এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে স্থানান্তরিত হতে পারে। এসব কারণে এত দূর থেকে এসে রিটার্ন দাখিল করা কষ্টকর হয়ে পড়ে।
এক্ষেত্রে আপনি চাইলে ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারেন। এজন্য আপনাকে আগের সার্কেলে উপ-কর কমিশনার বরাবর যথাযথ কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। আপনার আবেদনে যদি উপ-কর কমিশনার সন্তুষ্ট হন তাহলে ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন এবং নতুন ঠিকানা অনুযায়ী যে সার্কেল নির্ধারিত হয়েছে সেই সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
তবে ঠিকানা পরিবর্তন করা যদি আপনার কাছে ঝামেলাপূর্ণ মনে হয় তাহলে বর্তমানে যে সার্কেলে রিটার্ন জমা দিচ্ছেন ওই সার্কেলেই সময়মতো রিটার্ন দাখিল করে দিন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করলে কী হয়?
কর দিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হারে জরিমানা দিতে হবে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করে বাড়তি জরিমানা পরিহার করার চেষ্টা করুন।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ বাতিল হয়ে আয়কর আইন ২০২৩ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং এর ফলে ব্যক্তি করদাতার আয়কর গণনাসহ ট্যাক্স রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য কিছু পরিবর্তন এসেছে যা আপনারা আগেই জেনেছেন। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী কোন ব্যক্তি করদাতা যদি কর দিবস অর্থাৎ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হতেন তাহলে মাসিক ২% সুদ দিতে হতো। এই সুদ বকেয়া করের উপর গণনা করে রিটার্ন দাখিল করার সময় চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হতো।
কিন্তু আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী ২% এর পরিবর্তে মাসিক ৪% করে সুদ দিতে হবে, এবং ৪% সুদ গণনা হবে মোট করদায়ের উপর। অর্থাৎ আপনি যদি কোনো অগ্রিম কর দিয়েও থাকেন বা উৎসে যদি কোনো কর প্রদান করা হয়েও থাকে তা বিবেচনা করা হবে না। এখানে উল্লেখ্য, কোন মাসের ভগ্নাংশও এক মাস হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন, কোন করদাতা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। পরে তিনি ডিসেম্বর মাসের ০৭ তারিখে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন তাহলে এক্ষেত্রে এক মাসের জন্য ৪% করে সুদ দিতে হবে।
আবার ধরুন, কোন করদাতা জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে রিটার্ন দাখিল করেছেন তাহলে দুই মাসের জন্য ৪% করে বকেয়া করের উপর সুদ দিতে হবে।
এখানে একটা প্রশ্ন করতে পারেন, পূর্বের আইন অনুযায়ী কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে না পারলে বর্ধিত সময়ের জন্য উপকর কমিশনারের কাছে আবেদন করতে হতো। এখনো কি আবেদন করতে হবে?
সময় বৃদ্ধির আবেদন করতে হবে কি?
না।
আয়কর আইন ২০২৩-এ যদি কোনো ব্যক্তি করদাতা আয়কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে না পারেন তাহলে সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করার কথা উল্লেখ নেই। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে পরে কীভাবে রিটার্ন দাখিল করবো? এর উত্তর হলো, আপনি এখন থেকে বছরের যেকোনো সময় রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে আগের মতো ছাপানো ফরমে উপকর কমিশনার বরাবর আবেদন করতে হবে না এবং সময় বৃদ্ধি চেয়েও বারবার আবেদন করতে হবে না।
আপনি ৪% সুদ দিয়ে বছরের যেকোনো সময় এখন থেকে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। আগে এই সুদ ছিলো ২% । এখন এই সুদ দ্বিগুণ হারে দিতে হবে এবং ভগ্নাংশ মাসের জন্যও সম্পূর্ণ মাসের জন্য সুদ গণনা করতে হবে তা আপনি ইতোমধ্যেই জেনেছেন।
এছাড়া সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, আপনি কর রেয়াত সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। আপনি জানেন যে বিনিয়োগ বা দান করেছেন তার উপর কর রেয়াত দাবী করা যায় এবং তা করদায় থেকে বাদ যায় কিন্তু এই কর রেয়াত বাদ দিতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনার যে মোট করদায় তাই আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। এবং এই মোট করদায়ের উপরই আপনাকে ৪% হিসেবে সুদ গণনা করতে হবে।
এখানে আপনি একটা প্রশ্ন করতে পারেন, উৎসে কর এবং অগ্রিম কর যদি পরিশোধ করা হয়ে থাকে তাহলে তা কি মোট করদায় থেকে বাদ যাবে? – এর উত্তর হচ্ছে, না।
আগে আপনি মোট করদায় থেকে কর রেয়াত, উৎসে কর এবং অগ্রিম কর বাদ দিয়ে যে নীট করদায় ছিলো তার উপর সুদ গণনা করতেন । কিন্তু আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী এখন থেকে বিলম্ব সুদ গণনার সময় এগুলো বাদ দেওয়া যাবেনা। মোট করদায়ের উপর আপনাকে ৪% হিসেবে বিলম্ব সুদ গণনা করতে হবে।
বিলম্ব সুদ কত দিতে হয়?
ইমতিয়াজ সাহেবের মোট করদায় ছিল ১৭৪,২০০ টাকা। তা থেকে কর রেয়াত ও উৎসে কর বাদ দেয়ার পর নীট করদায় ছিল ৩৩,৩২০ টাকা। অর্থাৎ এই টাকা সরকার তাঁর কাছ থেকে পাবে।
ধরে নিলাম, আবদুল করিম ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি। তার কিছু দরকারি কাগজপত্র এখনো হাতে পাননি। পরে তিনি ২০ জানুয়ারি রিটার্ন দাখিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাহলে এখন তিনি কতো টাকা বিলম্ব সুদ দিবেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করার ফলে কী ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তা দেখে নিন৷
তিনি যেহেতু ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি তাই ১৭৪,২০০ টাকার উপরেই ৪% হিসেবে সুদ গণনা করতে হবে। তিনি যে কর রেয়াত পেয়েছেন তা বাতিল হয়ে যাবে এবং উৎসে যে কর দিয়েছেন তা বিলম্ব সুদ গণনার সময় বিবেচনা করা হবে না। যদিও তিনি জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখে রিটার্ন দাখিল করছেন তারপরেও তাকে সম্পুর্ণ মাসের জন্য ৪% হিসেবে সুদ দিতে হবে ।
তাহলে দুই মাসের জন্য সুদ হবেঃ ১৭৪,২০০ × ৪% × ২ = ১৩,৯৩৬ টাকা
করদাতা যখন ২০ জানুয়ারি তার রিটার্ন জমা দিবেন তখন চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাঘারে জমা দিতে হবে ৯২,১৩৬ টাকা (১৭৪,২০০ + ১৩,৯৩৬ – ৯৬,০০০)। এখানে যে ৯৬,০০০ টাকা বাদ দিয়েছি তা হলো উৎসে কর । অর্থাৎ আপনি ৪% সুদ গণনার সময় উৎসে কর এবং অগ্রিম কর বিবেচনা না করে সুদ গণনা করবেন। কিন্তু প্রদেয় কর গণনার সময় তা বাদ দিবেন। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এখানে লক্ষ্য করুন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল না করার কারনে একদিকে ইমতিয়াজ সাহেব ৪৪,৮৮০ টাকা কর রেয়াত সুবিধা হারালেন এবং অন্যদিকে মোট করদায় ১৭৪,২০০ টাকার উপর দুই মাসের জন্য ১৩,৯৩৬ টাকা বিলম্ব সুদ দিতে হলো। তাহলে তাঁর মোট আর্থিক ক্ষতি হলো ৫৮,৮১৬ (৪৪, ৮৮০ + ১৩,৯৩৬) টাকা। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে কর দিবসের পূর্বে আয়কর রিটার্ন দাখিল করুন। এতে করে জরিমানার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
Bangladesh Professionals VAT & Tax Law Firm